নিজেস্ব প্রতিবেদক: মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে যাচ্ছেন রাজধানীবাসী দেশের যোগাযোগ-ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন নিয়ে আসা আওয়ামী লীগ সরকার এবার আরও একটি অঙ্গীকার পূর্ণ করলো। ২০২২ সালে মেট্রোরেল চলাচলের মাধ্যমে যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল, চলতি বছরের অক্টোবরে রাজধানীর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো চালু করে কথা রাখলো সরকার। এর মাধ্যমে মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে যাচ্ছে রাজধানীবাসী।
গত বছর ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর স্টেশন থেকে সবুজ পতাকা উড়িয়ে প্রথম ট্রেনটির যাত্রার সূচনা করেন। এরপর থেকে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে চলছে মেট্রোরেল। আগামী ২৯ অক্টোবর মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। ওইদিন এই অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রো চালু হলে ২০ কিলোমিটারে যোগাযোগে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে শুরুতে কেবল সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ট্রেন চলবে। পরে ধীরে ধীরে বাড়বে সময়। প্রথম দিন থেকে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলে যাত্রী ওঠানামা করবে। এই অংশে স্টেশনের সংখ্যা ৭। এর মধ্যে বিজয় সরণি, কাওরান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাদ পড়ছে শুরুতে।
ডিএমটিসিএল এমডি ছিদ্দিক বলেন, যে তিনটি স্টেশন দিয়ে এ অংশের প্রস্তুতি চলমান, তা একদম শেষ পর্যায়ে। এখন ফিনিশিং কাজগুলো চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি স্টেশনগুলো চালু করতে সর্বোচ্চ তিন মাস সময় প্রয়োজন হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যানজট কমিয়ে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে কাজ শুরু করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকাতে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট পাঁচটি প্রজেক্টে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। আর এই উদ্যোগের শুরু হয় এমআরটি লাইন-৬ এর হাত ধরে। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল প্রাথমিক পরিকল্পনায়। পরে তা সংশোধন করে কমলাপুর পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়। ফলে পথের দূরত্ব দাঁড়ায় ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটারে।
ডিএমটিসিএল’র দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন হচ্ছে ৮ ধাপে। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়। এই পৌনে ১২ কিলোমিটারের প্রধান ডিপো তৈরি হয় উত্তরার দিয়াবাড়িতে। এরপর আগারগাঁও পর্যন্ত পথে মোট নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এসব কাজ শেষ করে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর এই পৌনে ১২ কিলোমিটার মেট্রোপথে যাত্রী পরিবহনের জন্য উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের একদিন পর থেকে যাত্রী পরিবহন করছে। এরপর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সোয়া ৮ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজও শেষের পথে। যা এখন চালুর অপেক্ষায়।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, উদ্বোধনের জন্য ট্রায়াল শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই ট্রায়াল হচ্ছে। মতিঝিল অংশে কাজ নিয়োজিত কর্মীরা জানিয়েছেন, ওপরের কাজ প্রায় শেষ, এখন শুধু যাত্রী ওঠানামার স্থানের কাজ বাকি। সেটাও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়ে যাবে।
ডিএমটিসিএল’র ওয়েবসাইটে দেওয়া সেপ্টেম্বরের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ এর প্যাকেজ-৫ এ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সোয়া ৮ কিলোমিটারের সার্বিক বাস্তব অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। বাকি কাজ উদ্বোধনের আগেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, সময়সূচি অনুযায়ী উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে ট্রেনে চড়ে মতিঝিল যাবেন। সেখানে নামফলক উন্মোচন করবেন। এরপর ট্রেনে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশনে নেমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
২০২৫ সালের মধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ চালুর লক্ষ্য ঠিক করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ কাজ শেষ হলে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসা-যাওয়া করা যাত্রীরাও সহজে মেট্রোরেলের সুবিধা পাবে।
অন্যদিকে, এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি মেট্রো লাইন তৈরির প্রকল্প নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার, যা পুরোপুরি কার্যকর হলে ঢাকার ভয়াবহ যানজটের সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।