নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে পৃথক দুই ধারায় ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তার মা লিলাবতী হালদার, ছোট ভাই প্রিতিশ কুমার হালদারসহ ১৩ জনকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৩৪৮ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থপাচারের দায়ে তাকে আরও ১২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৬৯৬ কোটি ৭ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৬ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পি কে হালদারের মা লিলাবতী হালদার, ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও শংখ বেপারীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে সর্বনিম্ন সাজা তিন বছর করে কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অর্থপাচারের দায়ে প্রত্যেককে সর্বনিম্ন সাজা চার বছরের কারাদণ্ড এবং বিভিন্ন অঙ্কের অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে লিলাবতী হালদারকে ৫৪ কোটি ২০ লাখ ১৬ হাজার ৩২৪ টাকা, অবন্তিকা বড়ালকে ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪২৩ টাকা, শংখ বেপারীকে ১৫ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ৯১৪ টাকা, সুকুমার মৃধাকে ১৬ কোটি টাকা, তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে ১০ লাখ টাকা, পূর্ণিমা রানীকে ৭ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, উত্তম কুমারকে ৮৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা, অমিতাভ অধিকারীকে ৬৯ কোটি ৭ লাখ ১৩ হাজার ৬১৩ টাকা, প্রিতিশ কুমারকে ১ কোটি ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৯ টাকা, রাজিব শর্মাকে ৫৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৩০ টাকা, সুব্রত দাসকে ২ কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার, অনঙ্গ মোহনকে ১৩৯ কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩০ টাকা এবং স্বপন কুমারকে ১৪ কোটি ৩ হাজার ১৬১ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, চারটি ফ্ল্যাট, ৬ হাজার ৪১৯ দশমিক শূন্য ৫৫ ডেসিমাল জমি, ১১টি যানবাহন, বিভিন্ন ব্যাংকের ৪১ হিসাবের ১ কোটি ৮৭ লাখ ৪৭ হাজার ৮৮১ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার ১৪ আসামির মধ্যে সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও শংখ বেপারী কারাগারে আছেন। এদিন রায়ের আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পি কে হালদারসহ ১০ জন পলাতক। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর আহাম্মদ আলী সালাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত ৪ অক্টোবর দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আদালতে রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ৪২৫ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পিকে হালদারসহ অন্য আসামিরা বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪২৫ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজেদের দখলে রেখেছেন। মামলাটি তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করে দুদক৷ চার্জশিটে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশটিতে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।