নিজেস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকামী প্রতিটি ভোটারের প্রতি আমাদের আহ্বান, রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে যারা আপনাকে গত ১৫ বছর অধিকার বঞ্চিত রেখেছে, তাদেরকে আপনি অন্তত একদিন (রোববার) বয়কট করুন। বিশ্বাস রাখুন, আপনার এই একদিনের সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী সরকারের কবর রচিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
স্বাধীনতার সম্মান-গৌরব-মর্যাদা ফিরে পাবে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত, লাল-সবুজের পতাকা। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে আজ ভোট বর্জন করি।
আসুন আমরা আওয়াজ তুলি, ৭ জানুয়ারী ভোট বর্জন করুন। ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭ জানুয়ারি সারাদিন-পরিবারকে সময় দিন। আপনি-আপনার পরিবার-স্বজন-বন্ধুবান্ধব-পরিচিতজন এবং প্রতিবেশীদেরও, ভোটের নামে বানর খেলার আসর বর্জন এবং ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করুন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ জানুয়ারি আরেকটি একতরফা পাতানো নির্বাচনের সবচেয়ে অন্ধকারময়-তিমিরাচ্ছন্ন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে।
আজ এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এক গভীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অভিনব মডেলের ডামি নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১৫ বছরের মতো আবারও ক্ষমতায় থাকতে এক বিপজ্জনক খেলার আয়োজন করা হয়েছে। আবারও প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের দলদাস রাষ্ট্রযন্ত্র শুধু দেশের মানুষকেই অগ্রাহ্য করেনি, তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিতই করেনি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্য তথাকথিত ভোট রঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর বিপদের অতলে। ইতোমধ্যে এ তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের নৃশংসতম বর্বরোচিত ন্যক্কারজনক ঘটনার পরই আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি। প্রকৃত দোষীদের আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সাত সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মহানগর ডিবি পুলিশ প্রধান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নাকি বিএনপি নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনায় বিএনপিকে দুষছেন। কি হাস্যকর বয়ান। ক্রসফায়ারের নিত্যদিন একই কাল্পনিক গল্পের মতো তাদের প্রতিটি ঘটনায় গল্প তৈরি থাকে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে তুলে নিয়ে গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এখন তাদের নৃশংস নির্যাতন করে দোষ চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও তাদের দলীয় পুলিশ প্রশাসনের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতে বিএনপিসহ বিরোধীদের ওপর দায় চাপিয়ে বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহিংস হিসেবে দেখাতে পারে। যেমনটা তারা ১৯৯৬,২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। প্রায় প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটা প্রকাশ হচ্ছে কোনোটা ঢাকা দিচ্ছে পুলিশ।
রিজভী আরও বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দিয়ে নারী শিশুসহ চারজন সাধারণ নিরীহ মানুষকে নৃশংসতমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এই বর্বরতার ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছি। এ ক্ষমতা লিপ্সু সরকারের কোনো তদন্তের ওপর দেশের জনগণের ন্যূনতম আস্থা-বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের তদন্তের টার্গেট থাকে বিএনপিকে দোষী বানানো। অনেক মিথ্যা ঘটনা তারা সৃষ্টি করে তার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনোটাই আখেরে ধোপে টেকেনি।
গত ৪৮ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের গ্রেপ্তার, মামলা, আসামি এবং আহতদের তালিকা তুলে ধরেন তিনি।
রিজভী জানান, এ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫৫ নেতাকর্মীকে, আহত হয়েছে ৬০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩৫৫ নেতাকর্মীকে।