আরিফুল হক : দীর্ঘ দেড় মাস ভারতের এক শহর থেকে আরেক শহরে ঘুরে অবশেষে বিশ্বকাপের তরী এসে নোঙ্গর করেছে আহমেদাবাদে। দশ দল থেকে আট দলই নেমে গেছে তরী থেকে। রয়েছে কেবল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। সোনালী ট্রফিটি উচিয়ে ধরার আশায় ফাইনালের মহামঞ্চে মুখোমুখির অপেক্ষায় দুই দল।
ফাইনালের মঞ্চে আসার পথটা কেমন ছিল ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য? এক শহর থেকে আরেক শহরে ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরেছে তাদের ভাগ্য। ডানা মেলেছে স্বপ্ন। আসরের পাঁচবারের শিরোপাধারীদের সামনে চতুর্থবার ফাইনালে পা রাখা দশে দশ তুলে নেওয়া অপরাজেয় ভারত।
আগামী রোববার (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে। তার আগে আরেকবার দেখে নেওয়া যাক দুই দলের ফাইনালে আসার অলিগলি। কিভারে তারা উঠে পড়েছে ‘রোড টু ফাইনাল’-এর গাড়িতে।
এ নিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩ আসরের ইতিহাসে অষ্টমবারের মতো ফাইনালে উঠলো অস্ট্রেলিয়া। অতীতে সাতবার ফাইনালে খেলে রেকর্ড পাঁচবার শিরোপা জিতে নেয় অজিরা। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) আসরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা।
অবশ্য তাদের জন্য ফাইনালে আসার পথটা এতো সহজ ছিলো না। আসরের প্রথম দুই ম্যাচেই পরাজয়ের স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া। তাতে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের মিশন ‘হেক্সা’ বুঝি অঙ্কুরেই ঝরে পড়লো! কিন্তু সব ধারণা উল্টে দিয়ে পরের আট ম্যাচে টানা জয়ে নীল সমুদ্রে হলদে রং ছড়িয়ে দেয় প্যাট কামিন্সের দল।
প্রথম ম্যাচে চেন্নাইয়ে ফাইনালের প্রতিপক্ষে ভারতের কাছেই ৬ উইকেটের হার দিয়ে শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার বিশকাপ মিশন। পরের ম্যাচে সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে স্রেফ উড়ে যায় কামিন্সের দল। ১৩৪ রানের জয়ে অজিদের হতাশা উপহার দেয় বাভুমা বাহিনী।
এটুকুই। গ্রুপ পর্বের পরের সাত ম্যাচে যেন ‘সপ্তরথ’-এ চড়ে বসলো অস্ট্রেলিয়া। বুঝিয়ে দিলো এই আসরে নিজেদের অতীত ইতিহাস কতোটা জ্বলজ্বলে। শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শুরু। এরপর একে একে বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানকে ৬২ রানে, দিল্লিতে নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানে, ধর্মশালায় নিউজিল্যান্ডকে ৫ রানে, আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডকে ৩৩ রানে হারায় ‘ক্যাঙ্গারু’রা।
এরপর পুনেতে আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারানোর পর পেয়ে যায় সেমিফাইনালের টিকিট। পরে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শেষ চারে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের মহামঞ্চে পা রাখে রিকি পন্টিংয়ের উত্তরসূরীরা।
অন্যদিকে নিজেদের মাঠে আসরের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলা উপহার দিয়ে একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত থেকে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখে ভারত। অতীতে তিনবার ফাইনালে খেলে ১৯৮৩ ও ২০১১ সালে কপিল দেব ও মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত শিরোপা জিতে নেয়। এবার রোহিত শর্মার নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের দুয়ারে তারা।
আসরের প্রথম ম্যাচেই চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানকেও ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেয় রোহিত শর্মার দল। যে ম্যাচ নিয়ে সবার মাঝে উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল সেই ম্যাচে আহমেদাবাদে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে হ্যাটট্রিক জয় তুলে নেয় তেরঙ্গা পতাকার সারথীরা।
চতুর্থ ম্যাচে পুনেতে বাংলাদেশকেও ৭ উইকেটে হারিয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে ভারত। পঞ্চম ম্যাচে তাদের সামনে উড়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। ভারত জয় পায় ৪ উইকেটে। ছয় নম্বর ম্যাচে ইংল্যান্ডকে কাটায় কাটায় ১০০ রানে পরাজয়ের স্বাদ দেয় তারা। সপ্তম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দেয় ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও জয় ২৪৩ রানে।
নিজেদের শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ১৬০ রানে হারিয়ে টেবিল টপার হিসেবে সেমিফাইনালে চার নম্বর দল নিউ জিল্যান্ডকে পায় ভারত। জয়ের ধারা বজায় রেখে শেষ চারেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা। মুম্বাইয়ে কিউইদের ৭০ রানে হারিয়ে পৌছে যান স্বপ্নের ফাইনালে।আরেকবার উত্তালের অপেক্ষা প্রমত্ত গঙ্গা। সেই উত্তালে উদ্বেলিতের অপেক্ষায় গ্যালারির নীল সমুদ্র।