নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন শেষ হয়েছে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে। শঙ্কা থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে দিনভর রাস্তায় বের হয়েছিলেন নগরবাসী। তবে সন্ধ্যা নামতেই পাল্টে যায় সেই চিত্র। সবার মধ্যে যেন অবরোধভীতি কাজ করে। ফলে সন্ধ্যায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল একেবারে কমে যায়। মানুষের আনাগোনাও খুবই কম দেখা যায়।
নগরবাসী বলছেন, অবরোধে সকালে এবং সন্ধ্যায় বিএনপি-জামায়াত ঝটিকা পিকেটিং করছে। বুঝে ওঠার আগেই গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। এতে অনেকে বিপদে পড়ছেন। এজন্য সন্ধ্যার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন তারা।
রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর ‘ব্যস্ত সড়ক’ হিসেবে পরিচিত এমন বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দ্বিতীয় দফা অবরোধের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে রাজধানীর অন্তত চারটি স্পটে বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে যাত্রীবাহী বাসও ছিল। সেই শঙ্কায় আজ সন্ধ্যায় রাস্তায় গাড়ি ও মানুষের চলাচল কমেছে বলে মনে করছেন চালক ও যাত্রীরা।
কয়েকটি সড়ক ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িল-রামপুরা সড়কে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। অথচ সন্ধ্যায় এ সড়কে দাঁড়ালে একটি বাস পেতে অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। মিরপুর রোড, গুলশান থেকে শ্যামলী শিশুমেলা পর্যন্ত সড়ক এমনকি বিজয় সরণিতেও যানবাহন একেবারে কম।
আরও পড়ুন>> মিরপুরে শিকড় পরিবহনের বাসে আগুন
সন্ধ্যা ৬টার দিকে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে বাসের অপেক্ষায় থাকায় রবিউল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘এ রাস্তায় সন্ধ্যায় গাড়ি থাকে না—এটা ভাবতেও অবাক লাগছে। গত সপ্তাহে অবরোধের মধ্যেও তো এমন পরিস্থিতি ছিল না।’ তার ধারণা শনিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাসে আগুন দেওয়ায় আজ সন্ধ্যায় গাড়ি কম রাস্তায়।
গুলশান-১-এ একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিতে চাকরি করেন রামিমা নেওয়াজ। তিনি হেমায়েতপুরে নিজ বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করেন। গুলশান-১ এ ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে সন্ধ্যায় তাকে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে অন্যদিন আরও পরে বের হই। অবরোধ এজন্য আগে আগেই ছেড়ে দিয়েছেন বস। তবুও তো গাড়ি পাচ্ছি না। এখান থেকে গাবতলী যাবো। তারপর অন্য বাসে বাসায় যেতে হবে। রাত হলে পরিবারের সবাই চিন্তা করেন।’
সাভার থেকে গুলশান-১ এ আসা বৈশাখী পরিবহনের চালক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘রাস্তা এহন পুরাই ফাঁকা। আসার পথে যাত্রীও নেই। এদিক থেকে ওদিকে (গুলশান থেকে আগারগাঁও-শ্যামলী) যাওয়ার জন্য কিছু যাত্রী দেইখা আইলাম। আমরা এখন বাস গাবতলী নিয়া ওখানেই রাখমু। আর চালামু না আইজ।’
মিরপুর-কালশি-কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলাচল করে অছিম পরিবহন। তবে সন্ধ্যার পর এ পরিবহনের অধিকাংশ বাস রামপুরা পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আসছে। অছিম পরিবহনের চালক সোলেমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রামপুরার পর যাইতে মালিক নিষেধ করছে। ওদিকে রাস্তা ভালো না (ঝুঁকিপূর্ণ)। বিএনপি-শিবিরের পোলাপান আগুন ধরাইয়া দিলে জান শ্যাষ।’
এদিকে, বাস কম থাকলেও সিএনজি ও রিকশার দাপট দেখা গেছে সড়কে। তবে রিকশাচালকরা বলছেন, সন্ধ্যার পর অফিসফেরত মানুষ তেমন পাচ্ছেন না তারা। রাস্তার ফুটপাতে স্বাভাবিক দিনে সন্ধ্যার পর অফিস থেকে বাড়িফেরা মানুষের ভিড় থাকলেও তা চোখে পড়েনি আজ।
বাড্ডা ইউলুফ এলাকা থেকে রামপুরা কাঁচাবাজার পর্যন্ত নিয়মিত রিকশা চালান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আজ গাড়ি কম দেইখ্যা সন্ধ্যায় আইলাম এদিকে। কিন্তু লোক কম। অফিসের লোকজন সব কই গেলো, সেইডা বুঝতেছি না। মনে হয় তারা আগেই ফিরে গেছে।’
ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইমারুল ইসলাম। রিকশাচালকের সঙ্গে কথাপোকথন শুনে নিজেই দাঁড়ালেন তিনি। বলেন, ‘তার অফিসে প্রায় ১৫০ কর্মী। যাদের বাসা দূরে তারা আগেই ছুটি পেয়েছেন। সন্ধ্যার আগেই তারা বাসায় ফিরে গেছেন। হাঁটাপথে যাদের বাসা, তার একটু দেরিতে বের হয়েছেন।’
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘সড়কে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। মানুষের আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই। পুলিশ জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।’
ট্রাফিক পুলিশের রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘গাড়ি কম এটা পুরোপুরি সঠিক নয়। রাস্তায় গাড়ি-মানুষ সবার আনাগোনা আছে। হয়তো কোনো কোনো রুটে যানজট কম, সেজন্য গাড়িও কম মনে হতে পারে।’