1. admin@channel7bangla24.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

সারা দেশে হরতাল পালন বিএনপির, শান্তি সমাবেশ আ.লীগের

নিউজ ৭ বাংলা ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৪২ বার পঠিত

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীসহ সারা দেশে রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।

কোথাও কোথাও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে হরতালের প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশজুড়ে শান্তি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৩৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলার পাঁচ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে বোমা সদৃশ বস্তু, বাঁশের লাঠি, লোহার রড উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নয়জন, আলমডাঙ্গা থানায় ১২ জন, দামুড়হুদা মডেল থানায় তিনজন, দর্শনা থানায় পাঁচজন ও জীবননগর থানায় নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গায় হরতালের তেমন প্রভাব পড়েনি।

বাগেরহাট: বিএনপি-জামায়াতের ঢাকা হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বাগেরহাটে। সকাল থেকে হরতাল বাস্তবায়নে বাগেরহাটে বিএনপি-জামায়াতের তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। ফলে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন রুটের বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। তবে বাগেরহাট থেকে সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। ভোর ৬টার দিকে বাগেরহাট শহরের দশানী ট্রাফিক মোড়ে পথসভা করেন তারা। এতে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বসিরুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েশী আশরাফী জেমসসহ অনেকে।

বরগুনা: রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া বরগুনা বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো জেলায় ফেরেননি। তাই রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বরগুনায় মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে জেলা বিএনপির অফিসও রয়েছে তালাবদ্ধ।

সকাল থেকেই হরতালের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। শহরের সড়কগুলোতে সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে ভারী যানবাহন অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান রয়েছে।

জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বরগুনা পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। সড়কে দেখা যায়নি বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে। তবে ছাত্রদল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝটিকা মিছিল করেছে।

অন্যদিকে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এছাড়া পৌর সুপার মার্কেটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়েছে। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীরসহ সাবেক সিনিয়র নেতাকর্মীদের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার রাজধানীর সমাবেশের জন্য আমরা ঢাকায় এসেছি, এখনো বরগুনায় ফিরিনি। বরগুনায় কোনো নেতাকর্মী না থাকায় হরতালের মাঠে থাকতে পারিনি।

বগুড়া: সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের সাতমাথায় টেম্পল রোডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে শহরের টেম্পল রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সমবেত হন। একই সময় ওই সড়কের উত্তর প্রান্তে থাকা শহর বিএনপির কার্যালয়েও নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। এতে উত্তেজনার একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় শহর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপরে ককটেল হামলা চালানো হলে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এসময় শহর বিএনপি কার্যালয়েও হামলা করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে রাবার বুলেট ছুড়ে উভয়পক্ষকে হটিয়ে দেয়।

হরতালে শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি আটকে দিয়েছেন পিকেটাররা। এর আগে সকালে ছাত্রদলের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

সকাল ৮টার দিকে হরতালের সমর্থনে শহরের নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশ বাধা দিলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও এর অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের ৭০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

হরতালকে সামনে রেখে শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আর বিএনপির ডাকা হরতাল ছিল নিরুত্তাপ।

গোপালগঞ্জ: হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলচল করেছে। জেলা ও উপজেলা সদরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। তবে গোপালগঞ্জ ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা ছিল কম।

আওয়ামী লীগের পক্ষে জেলা ও উপজেলা সদরে হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সকাল ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের করা হয়।

মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাবউদ্দিন আজমসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। এছাড়া জেলার কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীতে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ দলটির ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর থানায় চারজন, ঘোড়াঘাটে নয়জন, বিরামপুরে ১২ জন, বিরলে দুজন, কাহারোলে একজন, চিরিরবন্দর তিনজন, পার্বতীপুরে দুজন, বীরগঞ্জে দুজন ও নবাবগঞ্জে তিনজনসহ মোট ৩৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান ও বিরল উপজেলা যুবদল নেতা নুরুজ্জামান রয়েছেন।

বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে শহরের জেল রোডে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে দুলালকে আটক করা হয়।

এদিকে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বিরল উপজেলা যুবদল নেতা নুরুজ্জামানকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।

হরতালের ডাক দিলেও দিনাজপুরে কোনো দলের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দিনাজপুরের কোথায় কোনো দলের মিছিল কিংবা পিকেটিং চোখে পড়েনি। হরতাল ডাকা হলেও জনজীবনে প্রভাব নেই কোনো। যানবাহন চলছে স্বাভাবিকভাবেই। এছাড়া শহরের সব ধরনের দোকান পাট রাখতে দেখা গেছে।

এদিন সকাল থেকে দিনাজপুর শহরের কলেজ মোড়, বাসস্ট্যান্ড, সুইহারী মোড়, হাসপাতাল মোড়, লিলির মোড়, মডার্ন মোড়, জেলরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

তবে জেলা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস দিনাজপুরে আসতে বা ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। জেলার রাস্তাঘাটগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ।

ঝালকাঠি: সকালে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ঝালকাঠিতে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি।

খবর পেয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সদস্য সচিবের বাসায় হামলা করেন। ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় জেলা বিএনপি সদস্য সচিবের বাসা থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের হোসেন, বিএনপি পন্থী আইনজীবী তুষার, প্রচার সেল কর্মী আরিফকে আটক করে পুলিশ।

এছাড়া রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে চার উপজেলার আরও ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

হরতালে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস এবং অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। ভোর থেকে মহাসড়কে বরিশাল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৮ এর একাধিক টিম টহল দিয়েছে। জেলা শহরসহ অন্যান্য শহর ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

তবে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করীম জাকির ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, হরতালের নামে নাশকতা এড়াতে হরতাল বিরোধী মহড়া দিয়েছি। বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে অপর পক্ষ হামলা ভাঙচুর করতে পারে। ভাঙচুরের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার জানান, বিএনপির তিনজনকে সকালে আটক করা হয়েছে। তাদের নামে মামলা করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: হরতালকে সামনে রেখে শনিবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৫ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় আটটি ককটেল ও ১০০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়।

এদিকে হরতালের কারণে জেলা শহরের প্রধান প্রধান মার্কেটসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো বাস, ট্রাক বা অন্যান্য বড় যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। ভটভটি, নসিমন, করিমন, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করেছে যথারীতি। তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দিয়েছে রাস্তায় রাস্তায়।

কুমিল্লা: সকাল ৮টায় কুমিল্লা নগরের চকবাজার এলাকায় বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মীকে আটক করারও দাবি উঠেছে। এছাড়া এসময় আহত হয়েছেন ২০ জন।

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও পুলিশের মারধরে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

তবে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় মিছিল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

নাটোর: নাটোরে নাশকতার চেষ্টাসহ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অভিযোগে এক জামায়াত নেতাসহ বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। হরতাল ছিল নিরুত্তাপ।

লালমনিরহাট: সন্ধ্যায় শহরের প্রাণ কেন্দ্র মিশন মোড়ে অবস্থিত লালমনিরহাট জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ‘হামার বাড়ি’তে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শ্রমিক নেতার মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরে সন্ধ্যায় এ হামলা করা হয়।

হরতালে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর রেলগেট এলাকায় সকালে শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলা চালান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে চারজন আহত হন। বিকেলে আহতদের একজন লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এর আগে সকাল ১১টার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান আওয়ামী লীগ নেতারা। হরতালকে কেন্দ্র করে জেলায় পৃথক ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকালে হরতালের সমর্থনে মিছিল করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিএনপি। একই সময় হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। মিছিলটি বুড়ির বাজার মসজিদ এলাকায় আটকে দেয় পুলিশ। এসময় বিএনপি অফিস থেকে আওয়ামী লীগ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়লে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এসময় আওয়ামী লীগের ধাওয়ায় বিএনপি পিছু হটলে তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করের শান্তি মিছিলের নেতাকর্মীরা। এতে অফিসের চেয়ার টেবিল, বিলবোর্ড, পোস্টার ভেঙে ফেলা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

একই সময় লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়, বড়বাড়ি ও মহেন্দ্রনগর বাজারে হামলা পিকেটিং করে পুলিশের দুটিসহ পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিএনপি। এতে ছয়জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো মন্তব্য করেনি পুলিশ।

নোয়াখালী: নোয়াখালীতে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হচ্চে। জেলার নয়টি উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল।

সকাল ৮টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার একটি সড়কে গাছের গুঁডি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেন হরতাল সমর্থকরা। দুপুর সোয়া ১টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে বিএনপির ১৫-২০ জন নেতাকর্মী হরতালের সমর্থনে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। জেলা বিএনপি অভিযোগ করেছেন, তাদের ২৫ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।

সকালে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ওমর ফারুক টফি জানান, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ শেষে ঢাকা থেকে নোয়াখালী ফেরার পথে লাকসাম, সোনাইমুড়ী চৌরাস্তা, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর থেকে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি এ জেড এম গোলাম হায়দার জানান, ঢাকায় আমাদের ২০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এখন বাড়ি ফেরার পথে আরও ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক নেতাকর্মীরা নিরপরাধ। আমি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।

সাতক্ষীরা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালেও সাতক্ষীরার জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। বিএনপির কোনো মিছিল বা পিকেটিং চোখে পড়েনি। অন্যদিকে সাতক্ষীরায় হরতালবিরোধী শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।

রোববার (২৯ অক্টোবর) সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরের পিএন স্কুল মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সঙ্গীতা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম।

অন্যদিকে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম গ্রেপ্তার হন। ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন তার বাবা মো. লুৎফর রহমান। শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি হরতালের। শহরের ভেতরে ও জেলা সদর থেকে উপজেলার যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকলেও আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে শহরে বিএনপির কোনো মিছিল বা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

সকাল সাড়ে ১০টায় কলাবাগানের ভাঙ্গাব্রিজ মোড়ে বিএনপির কয়েকজন কর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশের তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

অপরদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডাকে দলটি। তবে সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার আগে কাকরাইল ও বিজয়নগর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির কর্মীরা। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহতও হয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিক, পুলিশ সদস্যসহ অনেকে আহত হয়েছেন। ‘শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে’ বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে ওই কর্মসূচি মঞ্চ থেকেই রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। তাদের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জামায়াতসহ সমমনা অন্য দলগুলোও হরতাল ডাকে। এ ঘোষণার পরই একই দিন সারাদেশে শান্তি সমাবেশ ডাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

Facebook Comments Box
সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা