1. admin@channel7bangla24.com : admin :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

আশুরার তাৎপর্য এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

নিউজ ৭ বাংলা ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩
  • ২৯৪ বার পঠিত

মুফতি আমিনুল ইসলাম আরাফাত: হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। আবার চার সম্মানিত মাসের প্রথম ও অন্যতম মাসও মহররম। শরিয়ত বিবেচনায় যেমন এ মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, তেমন এই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও অনেক দীর্ঘ। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূচনা এই মাসে । আর তা শুধু এই উম্মতের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পূর্ববর্তী বহু নবী ও তাদের উম্মতের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে।

কুরআনুল কারীমে এই মাসকে আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত ও নিষিদ্ধ মাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে (অর্থাৎ জিলক্বাদ, জিলহজ ও মহররম) এবং চতুর্থ মাস মুজর গোত্রের রজব মাস। (বুখারি-৪৬৬২, মুসলিম-১৬৭৯)।
এ ছাড়া অন্য হাদিসে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

মহররমের ১০ তারিখকে আশুরার দিবস বলা হয়। মহররম মাস সম্মানিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো আশুরা। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে এই দিনে সংঘটিত হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। এই দিনে হযরত মুসা (আ.) তাঁর অনুসারী সম্প্রদায় বনী ইসরাইল ফিরআউনের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেন। লোহিত সাগরে ডুবে নিঃশেষ হয়েছিল খোদা দাবিদার ফিরআউন ও তার বিশাল বাহিনী। এই তারিখেই তিনি সিনাই পর্বতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবুওয়ত লাভ করেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) সর্বদা এই দিনে রোজা রাখতেন ও তাঁর উম্মতকে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন।

এ ছাড়া আশুরায় উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ ইত্যাদি। বন্যাকালীন হযরত নূহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রার শুরু এবং বন্যার সমাপ্তিও ছিল এই আশুরাকেন্দ্রিক। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি, হযরত ইউনুছ (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্তি, হযরত দাউদ (আ.)-এর জালুতের উপর বিজয় লাভ, হযরত আইয়ুব (আ.)-এর রোগমুক্তি, হযরত ঈসা (আ.)-কে আসমানে উত্তোলনসহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এই আশুরার দিনে। (তথসূত্র: তাফসিরে তাবারি, ইবনে জারির)।

(উল্লেখ্য: উল্লিখিত সব ঘটনার সূত্র শক্তিশালী না হওয়ায় অনেকে এটিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। এই দিনে এসব ঘটনা প্রমাণিত না হলেও এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য সামান্যও বিঘ্ন হবে না। কেননা হাদিস শরীফ ও নবীজীর আমলই এই দিনের মাহাত্ম্য ও মর্যাদার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।) আশুরার ইতিহাসে গৌরবের সর্বশেষ পালক মর্মান্তিক কারবালা। হযরত হুসাইন (রা.) আশুরার দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে প্রতারণার শিকার হয়ে জালিমের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। যা মুসলিম উম্মাহের জন্য অন্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এক আদর্শিক শিক্ষা।

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে এই দিনেই মুসলমানদের উপর রোজা আবশ্যক ছিল। পরবর্তীতে যখন রমজানের ফরজ করা হয়, তখন নবী কারীম সা. এই দিনের রোজাকে উম্মতের জন্য ঐচ্ছিক করে দেন। তবে বহু হাদিসের মাঝে এই দিন ও এইদিনের রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নবী কারীম সা. কখনো এই দিনের রোজা ছাড়তেন না। তা নফল রোজা হলেও রমজানের রোজার এই দিনের রোজা সবচেয়ে ফজীলতপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

তবে অনেকে আশুরার দিনকে কারবালার ঘটনাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ করে এই দিনে নানাবিধ অনৈসলামিক ও অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হন। যা কোনভাবেই সঠিক ও সমীচীন নয়। আবার এদের বিরোধিতা করত আশুরার দিনকে অবজ্ঞা করা, এই দিনের ফজীলত অস্বীকার করাও সমর্থনযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আশুরার দিনের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুক।

Facebook Comments Box
সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা