জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বিএনপির আন্দোলন থেকে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এলে এবং দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়ে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২১ অক্টোবর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫তলা ভবন উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামতে চায়। আরো অনেকেই নামতে চায়। তারা আন্দোলন করুক এতে আমাদের কোনো এই ব্যাপারে কথা নাই। তারা যদি আবারো অগ্নিসন্ত্রাস করে, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি দুর্বৃত্তপরায়নতা করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেবো না।’
‘কারন এই বাংলাদেশ পঁচাত্তর সাল থেকে ’৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮-এই ২৯ বছর মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যারা ক্ষমতায় ছিলো নিজের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিলো, দেশের মানুষের না। একমাত্র যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আজকে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন করছি। কোনোদিক থেকে পিছিয়ে নেই।’
এ সময় অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার করে তাদের সাজাপ্রাপ্তিতে ভুমিকা লাকতে আইনজীবীদের প্রতি দাবি জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের সাজা কেন দ্রুত হবে না। এই বিষয়ে আপনাদের (আইনজীবি) নজর দিতে হবে। কারন অন্যায়কে প্রশয় দিয়ে তা বাড়বে।
এ সময় বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ননীয় নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি আমাদের কতো নেতাকর্মী হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুরি দিয়ে পিটিয়েছে।
’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে তার সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে কাজ শুরু করেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোশতাক, জিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু থাকতে পারেনি। বেঈমানরা কখনোও থাকে না। কাজেই মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের।
জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটি আইন চালুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিচার পাওয়ার অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছিলো ইনডেমনিটি জারি করে। শুধু তাই নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস করা, হ্যাঁ না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট, সংধবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করা আর দল গঠনের মাধ্যমে জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে। যে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান তাদের ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন পদ দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
তিনি বলেন, আমি যেখানে ফিরে আসি যেখানে বাবা-মার বিচার পাবো না, সেই আইন রয়েছে। বিচারহীনতা যে সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলার মানুষ যে দু:খী, তারা শোষন বঞ্চনার শিকার ছিলো। তাদের এ থেকে মুক্তি দিয়ে উন্নত জীবন দেয়ার স্বপ্ন নিয়েই দেশে এসেছিলাম। বিজয়, স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ না হয়, সেজন্য আমি এসেছি, সংগ্রাম করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায়। তখনই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার শুরু করি। অনেক বাধা বিপত্তি স্বত্ত্বেও আমরা সেটি করেছি। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরন করে আমরা কাজ শুরু করি। মানুষ যাতে আইনের সেবা পায়, সেই লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা এ সময় তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইন পাওয়া, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি। ২০০১ সালে সরকার গঠন করতে না পারায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবারো ক্ষমতা এসে তা শুরু করি।
এ সময় আইনজীবিদের কল্যানে সব ধরনের সযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, আইনজীবি সমিতির ভবন শুধু বড় বড় শহরে না জেলায়ও করা হবে। এজন্য আইনজীবিদের পক্ষ থেকেও কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা কিছু ফান্ড তৈরি করেন। সরকারের পক্ষ থেকে করে দেয়া হবে।
আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অপরাধীদের মামলাগুলি চালালেই হবে না, যাতে সাজা পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কারন বিচারহীনতা যেন না চলে। ন্যায়বিচার যেন পায়। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা কেমন তা আমরা বুঝি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে শত শত সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনীর সদস্য, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। তাদের স্বজনরা এখনো কেঁদে ফেরে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার জড়িত। সবচেয়ে সুবিধাভোগী তো সে (জিয়াউর রহমান)। ক্ষমতায় আসার পর অপরাধীদের পুরস্কৃত করেছে। তার হাতেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসাররা হত্যা হয়েছে। কি অন্যায়ভাবে…এমন দিনও গেছে ১০জনকে ফাঁসি দিয়েছে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ক্যান্টনেমেন্ট। আজকে সেই বিএনপি-জামায়াত এদেশের মানুষের ওপর আক্রমন করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়।
এ সময় সর্বজনীন পেনশন স্কীম গ্রহন করতে আইনজীবিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রত্যেক জেলায় জুডিসিয়াল মেজিস্টেড ভবন করে দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আইন ডিজিটাল, রায় ডিজিটাল, বাংলায় অনুবাদ করা, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ই জুডিশিয়াল সিস্টেম চালু করার উদোগ নিয়েছি।
এ সময় এক-এগারোতে মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করার পর পাশে থাকায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনে প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যান যাতে করতে পারি।
অতীতে আইনজীবীদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আইনজীবিদের ওপর বিএনপি-জামায়াত হামলা করেছিলো। প্রত্যেকটা জেলায় যাতে আপনারা সুরক্ষিতভাবে বসবাস করতে পারেন, সেজন্য জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা আমরা করে দেবো।
এ সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না না থাকে, সেজন্য কিছু না কিছু উৎপাদন করতে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ। প্রত্যেকে যে যার ধর্ম পালন করবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে।
আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের পাশে থাকবেন। যেখানেই অন্যায় দেখবেন অন্যায়কারী যাতে সাজা পায় সেজন্য মানুষের পাশে দাড়াবেন।
এ সময় দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্টায় বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ১০ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান উপহার দেন, যা বিশ্বে বিরল। কোনো দেশ তা দিতে পারেনি। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট উদ্বোধন করেন। জাতির তিার হাত ধরেই দেশের বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন। শুধু সংবিধানই দেননি ১৯৭১ সালে বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ মাত্র সাড়ে ৩ বচরে গড়ে তুলেছিলেন। যখন কোনো রিজার্ভ ছিল।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।